January 24, 2025
ইসলামী প্রতিবেদক : আইয়ামে জাহেলিয়াত। আরব তথা সমগ্র বিশ্ব এক গাঢ় আধ্যাত্মিক তমসায় আচ্ছন্ন ছিলো। হত্যা, লুণ্ঠন, মিথ্যা, পাপাচার ও অন্যায় অবিচারে ভরপুর ছিলো সমগ্র আরব উপদ্বীপ। আঁধারে নিমজ্জিত ছিলো চারদিক। শোষণ, অত্যাচার আর নারী নির্যাতনের মোহড়া চলতো যখন তখন। জীবন্ত প্রোথিত হত অসহায় মা বোনেরা। অভিশাপ মনে করা হতো নারী জাতিদের। এমন দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে যুগযুগান্তরের সেই অন্ধকার ভেদ করে আলোর রশ্মি ফুটে ওঠলো আরবের ঊষর মরুভ‚মির বুকে। মহাসঙ্কট ও নৈরাশ্যজনক পরিবেশের কোনো এক প্রসন্ন প্রভাতে সত্য, প্রেম, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, সৌহার্দ্য ও ন্যায়ের উজ্জ্বলতার ভাস্বর এক আলোর প্রদীপ জ্বলে ওঠলো। এক মহামানবের আগমন বার্তা বহন করে আনলো ক্ষমতাসীন পারস্য সা¤্রাজ্যের শোষণ নির্যাতনের সকল অগ্নিশিখার মরু সাইমুমের প্রলয় মাতম। ঘোষিত হলো, শতসহস্র বছরের শোষণ-শাসনের নরককুণ্ড থেকে নির্যাতিত মানবাত্মার চিরমুক্তি তথা সাম্য, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের আহ্বান।
দুনিয়ার নিবিড়তম অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করেও বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন। সাহায্যহীন, বন্ধু-বান্ধবহীন, শত্রæ কর্তৃক পরিবেষ্টিত অশিক্ষিত অসভ্য জাতির ভেতর দিয়ে জীবন প্রতিপালিত, তবুও তিনি চিরকালের নবারুনের মতো উদিত হয়ে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের মহান আদর্শ দ্বারা নিখিল জাহান থেকে অন্যায়, আত্মকলহ ও নারী নির্যাতন দূরীভ‚ত করে প্রজ্বলিত করলেন ধর্মের বিমলজ্যোতি। গড়ে তুললেন ন্যায়, সাম্য ও ঐক্যের অনুপম উজ্জ্বল বন্ধন হেরার রাজ তোরণ।
তিনি আর কেউ নন, আমাদের প্রিয়নবী মহানবী বিশ্ব জাহানের রহমত স্বরূপ মুহাম্মদ (সা.)। রাসুলের আগমনে নারীরা ফিরে পায় তার সম্মান। মুক্ত হয় নির্যাতনের কালো ছায়া। দিয়েছেন তাদের যথার্থ সম্মান আর মর্যাদা। বোন পেয়েছে ভাই, মা পেয়েছে সন্তান, স্ত্রী পেয়েছে তার জীবন চলার মাধ্যম। মহানবী (সা.) নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঘোষণা দেন, ‘সাবধান! তোমরা মেয়েদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো, কেননা তারা তোমাদের তত্তবধানে রয়েছেন। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি তোমাদের উপরও রয়েছে তাদের অনুরূপ অধিকার। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের রক্ষক এবং স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের এবং সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ২৭৬) মানবসভ্যতা ও ধর্মের ইতিহাসে এ প্রথম নারী ন্যায্য সম্পত্তি পাওয়ার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার পেলো। মহানবী (সা.) নারীদের তাদের পছন্দনীয় স্বামী গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কন্যা সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ করে দেন। উপরন্তু কন্যা, মেয়ে, বোন লালন-পালনকারীদের জান্নাত লাভের সুসংবাদ দেন। পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ঘোষণা দেন। ‘মা তোমাদের জন্য জান্নাত স্বরূপ’।
কিন্তু আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, নারীজাতি আজ নিজেদের সম্মান ভুলে গিয়ে পথেঘাটে রাস্তার আনাচকানাচে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে চলাফেরায় মত্ত। নির্যাতন আর ধর্ষণের যাবতীয় প্রারম্ভিকা শুরু হয় তাদের আঁটসাঁট কাপড় দেখে। অথচ পবিত্র কুরআনে
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার ও বেশভ‚ষা জন্য আমি তোমাদের পরিচ্ছদ দিয়েছি। আর তাকওয়া পরিচ্ছদই তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট পরিচ্ছদ। (সুরা আরাফ: ২৬) তাফসিরবিদ এবং মুফতিয়ানে কেরাম বলেন, পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলাদের সতর হলো, আপাদমস্তক অর্থাৎ পুরো শরীর। সুতরাং মহিলাদের শরীরের কোনো অংশ খোলে রাখার অবকাশ নেই। নারীজাতি যদি হারানো সেই সম্মান ফিরাতে চায়, তাহলে ইসলামের অনুশাসন ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। সবিশেষ বলবো, নারী নির্যাতন আর ধর্ষকের পেছনে চালিকাশক্তি থাকে উভয়ের। তাই পুরুষ ও মহিলাজাতি যখন উভয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়া আশ্রয় নিবে, ঠিক তখনই সমাজ থেকে সবধরণের অশ্লীল ও অপকর্ম দূরীভ‚ত হবে ইনশাআল্লাহ।