January 24, 2025
স্পোর্টস ডেস্ক : ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সময়ের পালা বদলে বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে গেছে অনেকট। বদলে গেছে ক্রিকেটারদের মানসিকতাও। ২০০৬ সালের সিরিজে খেলা সেই মুখগুলোও নেই। হাবিবুল বাশাল খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে এখন নির্বাচকের ভূমিকায়। শাহরিয়ার নাফীসের মতো অনেকেই ছিটকে গেছেন দল থেকে। এবারের সিরিজে যে দলটি খেলতে নামছে, সেখানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তারও নেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। তার মতো প্রথমবার স্টিভেন স্টিথদের বিপক্ষে নামতে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব হাসান।
সেই হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রবিবার মিরপুর টেস্টে দিয়ে শুরু হওয়া দুই ম্যাচের সিরিজে যে ‘অনভিজ্ঞ’ বাংলাদেশ নামতে যাচ্ছে, সেটা বলাই যায়। মূল লড়াইয়ে নামার আগে শনিবার কঠোর অনুশীলন করে কাটিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যেন ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’- এমন মানসিকতাই ফুটে উঠেছে মুশফিকদের অনুশীলনে।
কোচিং স্টাফরা মিরপুরের ইনডোরে ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেছেন আলাদা আলাদা ভাবে। এমনকি বাদ পড়েননি এইচপির কোচ মাহবুবুল আলম জাকি ও হাই পারফরম্যান্সে সদ্য যোগ দেওয়া চম্পাকা রামানায়েকেও।
মিরপুরের ইনডোরে অনুশীলনের জন্য আছে তিনটি উইকেট, যার একটিতে ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসেল ও মিজানুর রহমান বাবুল। দ্বিতীয়টিতে ব্যস্ত স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশি। তিনি তার স্পিন ত্রয়ী-মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাসিরকে নিয়ে করেছেন টানা অনুশীলন। যেখানে দুই বল পরপরই যোশি তার শিষ্যদের দিচ্ছিলেন দিক নির্দেশনা। স্কোয়াডের এই স্পিনার ছাড়াও নেটে বোলিং অনুশীলন করেছেন সাকলাইন সজীব ও সানজামুল ইসলাম।
আর তিন নম্বর উইকেটে পেসারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। তাসকিন আহমেদে, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলামের পাশাপাশি নেটে ছিলেন শুভাশিষ রায়, আল আমিন ও কামরুল ইসলাম। রিভার্স সুইং নিয়ে পেসারদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছেন ওয়ালশ। সেই কাজগুলো ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা, সেসব তদারকি করলেন তিনি। তাসকিন ও শফিউলকে ডেকে খানিকটা সময় কী যেন আলাপ করে নিলেন জীবন্ত এই কিংবদন্তী। মোস্তাফিজকে নিয়ে বেশি কাজ করেছেন হাই পারফরম্যান্সের কোচ মাহবুবুল আলম জাকি। দুই-তিন বল পরপরই মোস্তাফিজের সমস্যাগুলো শুনছিলেন এবং পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি পেছনে থেকে। ‘কাটার মাস্টার’ও বেশ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিলেন এবং পরামর্শ মেনে করে যাচ্ছিলেন বোলিং। স্কোয়াডের এই তিন পেসারকে নিয়ে যখন কাজ করছিলেন ওয়ালশ ও জাকি, তখন বসে থাকেননি সদ্যই নিয়োগ পাওয়া শ্রীলঙ্কান পেস বোলিং কোচ রামানায়েক।
নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন তামিম-ইমরুল-মুশফিকরা তাদের ব্যাটিং ইনডোরের উইকেটের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে দেখছিলেন ব্যাটিং পরামর্শক মাক ও’নিল। একই সঙ্গে ধরিয়ে দিচ্ছিলেন সমস্যাগুলো। এই যেমন ইমরুল যখন নেট শেষে ফিরছিলেন, তখন তার সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বললেন অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটিং পরামর্শক। এরই মাঝে আবার প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে পরামর্শ সেরে নিচ্ছিলেন তিনি। হয়তো একাদশ ঠিক কেমন হবে, সেইসব নিয়েই আলোচনা করছিলেন এই দুই কোচ। হাথুরুসিংহেকে মাঝে আবার কথা বলতে দেখা গেছে ওয়ালশ ও যোশির সঙ্গেও।
সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু মুশফিকরা এক ঘণ্টা আগেই মিরপুরে চলে আসেন। শুরুতে ওয়ার্মআপ সারেন খেলোয়াড়রা। এরপর হাথুরুসিংহের নেতৃত্বে মুশফিক-তামিম চলে যান উইকেটে। সেখানে বেশ খানিকক্ষণ সময় পিচ পর্যবেক্ষণ করে উইকেটের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেন তারা। পরের ধাপে শুরু হয় মিরপুরের ইনডোরে নেট অনুশীলন। প্রায় দুই ঘণ্টা নেট অনুশীলন করে মূল মাঠে ফিল্ডিং অনুশীলন করেন ক্রিকেটাররা।
১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা বলেই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রজি নয় বাংলাদেশ। একে অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘ দিন আসেনি বাংলাদেশ সফরে, এর ওপর আবার এবারের সিরিজ ঘিরে ছিল তৈরি হয়েছিল নানা নাটক। সবকিছুর জবাব দিতে ২২ গজে বাংলাদেশের ভালো পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। শনিবার মুশফিকদের কঠোর অনুশীলনই জানান দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে কোনও ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। মুশফিক-তামিমদের ভাণ্ডারে যত গোলা-বারুদ আছে, সব কিছু নিয়েই রণকৌশল সাজাচ্ছেন কোচিং স্টাফরা।
গত বছরের অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঢাকায় যে আনন্দ মিছিল হয়েছিল, ঈদের ঠিক আগে এবারও হতে পারে আরেকটি উৎসব। তার প্রস্তুতিই চললো শনিবার মিরপুরে।